বই: ড. মোহাম্মদ আমীনের বই

সিলেটে আহত চট্টগ্রামে নিহত

ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বাংলা ভাষা সিলেটে আহত চট্টগ্রামে নিহত উপন্যাসের একটি অংশ নিচে দেওয়া হলো।  প্রকাশক মাদার্স পাবলিকেশন্স। সরাসারি পেতে চাইলে যোগাযোগ: ০১৭১২ ৭১৯৮২৭।

ইংরেজি পরীক্ষা।

Ray শব্দের অর্থ পারছে না সবুজ । খুব বাজে ওয়ার্ড।সে তার সামনের টুলে বসা মিনহাজকে বলল, রে অর্থ কীরে?

উত্তর বঙ্গের ছেলে মিনহাজ বলল, রশ্মি (রোশশিঁ)। সিলটি পোলা সবুজ মনে করল অ আ ই; সে লিখল, Ray অর্থ ‘ই’ (হ্রস্ব-ই)। বাসায় গিয়ে দেখল ঠিক হয়নি। সবুজ বেটা রশমি-কে ‘রোশশিঁ’ বলে তার একটা নাম্বার কমিয়ে দিয়েছে। যত গন্ডগোল শালার ওই ম-তে। ম- মানে মরণ।

বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখকের নাম কিছুতেই মনে করতে পারছিল না সবুজ। বলল, এই মিনহাজ, ‘বীরবলের হালখাতা’ কে লিখেছে রে?

মিনহাজ বলল, “প্রমথ চৌধুরী”। প্রমথ চৌধুরী কারো নাম হতে পারে না, সবুজ ভাবল। নিশ্চয় ইংরেজি পরীক্ষার মতো শালা ‘ম’-টাকে উলটে দিয়েছে। সিলটি পোলার বুদ্ধি একটু বেশি কিনা। সবুজ প্রমথ চৌধুরী লিখল না। লিখল, বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক ‘প্রথম চৌধুরী’।

সবুজের পিছনে সুনামগঞ্জের পোলা রাকিব। সেও প্রশ্নটা পারছিল না। উঁকি দিয়ে দেখে নিল সবুজের খাতা। সবুজ লিখেছে, বীরবলের হালখাতা
গ্রন্থের লেখক “প্রথম চৌধুরী”।কিন্তু একই রকম লেখা যাবে না। সনৎ স্যার বলেছেন, “মেট্রিক পরীক্ষায় দুজনের উত্তর মিলে গেলে গোল্লা দেবে একজামিনার।” প্রথম চৌধুরী লিখলে একজামিনার মনে করবেন – নকল করে লিখেছে। অত বোকা নয়, রাকিব। সে লিখল বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক “১ম চৌধুরী”।

রাকিবের পেছনে ছিল, চাটগাঁইয়া পোঁয়া সাঈদ। সে রাকিবের খাতা দেখে নিল; রাকিব লিখেছে ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক ১ম চৌধুরী। কিন্তু সে একই রকম

মাদার্স পাবলিকেশন্স

লিখে নকলের ফাঁদে পড়তে চায় না। নকল করলে গোল্লা। চাটগাঁইয়া পোঁয়া, মেডিত পইল্যে লোয়া। সাঈদ লিখল, ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক এক ম চৌধুরী। সাঈদের পিছনে কক্সবাজারের মাইয়ো পোঁয়া রাজিয়া উঁকি দিয়ে দেখল, কিন্তু ভালোভাবে বুঝতে পারল না। ছেলেদের সঙ্গে তখন কথা বলা ছিল নিষিদ্ধ।রাজিয়া লিখল ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক একরাম চৌধুরী।

এই খাতাগুলো ঘটনাচক্রে মেট্রিক পরীক্ষার তৎকালীন প্রধান এক্সামিনার প্রমথ চৌধুরীর হাতে গিয়ে পড়ল। তিনি সিলটি ও চাটগাঁইয়া পোলাপানদের হাতে নিজের নামের এমন দুরবস্থা দেখে রাগে-ক্ষোভে মাথার সামনের সবগুলো চুল তুলে ফেলতে শুরু করেন।কিয়দংশ টাকু হবার পর বউ এসে বললেন, এমন পাগলামি করছ কেন? এমন করলে তোমাকে তো তোমার দেশের বাড়ি পাবনা পাঠিয়ে দিতে হবে।

না, আমি পাবনা যাব না, চিৎকার দিয়ে বললেন প্রমথ চৌধুরী, “আমি রবীন্দ্রনাথের বড়ো ভাই উপমহাদেশের প্রথম আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীর স্বামী, আশুতোষ চৌধুরী আমার বড়ো ভাই, আমি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক, আমি ব্যারিস্টার, আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম– আমাকে কিনা; ছি ছি ছি!” আমার সঙ্গে বিদ্রুপ?

বউ বললেন, তুমি বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধের রচয়িতা। হয়তো এজন্য বিদ্রূপ করে তোমার স্বীকৃতি দিয়েছে।

অমন স্বীকৃতি আমি চাই না, আবার চুল ছিড়তে শুরু করেন প্রমথ চৌধুরী।

বউ বললেন, তুমি বাংলায় চলিত রীতির প্রবর্তক, তাই ওরা তোমার নামকেও চলিত ভাষায় অনুবাদ করেছে। তোমার তো খুশী হওয়ার কথা।এটা তোমার উপহার গো।

এমন উপহার আমি চাই না, চাই না; এ উপহার আমার নাহি সাজে- – -।

কী হয়েছে গো, বলো না?

প্রমথ চৌধুরী ব্যথাকাতর গলায় বললেন, “বাংলা ভাষা আহত হয়েছে সিলেটে আর নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে।”

 

 

Leave a Comment

You cannot copy content of this page