বঙ্গাব্দের প্রবর্তক: শশাঙ্ক না আকবর

ড. মোহাম্মদ আমীন

বঙ্গাব্দের প্রবর্তক: শশাঙ্ক না আকবর

বাংলা নববর্ষ বা বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা কে? কেউ বলেন গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক আবার কেউ বলেন সম্রাট আকবর। আবার কেউ বলেন, তাঁদের একজনও না; বঙ্গাব্দ অনেক প্রাচীন। প্রাচীন নিয়ে বিতর্ক চলছে না। চলছে শশাঙ্ক আর আকবর নিয়ে। দুপক্ষের যেদিকে আমি মত দিই— অন্য পক্ষ নাখোশ হবেন। অনেকে জঘন্য ভাষায় অশালীন উক্তিও করে বসবেন। আসলে আমি জানি না, বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্ক না আকবর না অন্য কেউ। তবে বঙ্গাব্দের অন্তর্ভুক্ত মাসসমূহের নাম দেখে মনে হয়— এগুলো অনেক পুরানো। – – – নামসমূহ শুধু আকবর নয়, শশাঙ্কেরও বহু পূর্বে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থ ও শিলালিপিতে পাওয়া যায়। গুপ্ত যুগে প্রচলিত সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। – – -বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। নিচে কিছু প্রশ্ন রাখলাম তা থেকে আপনিই বের করে নিন বঙ্গাব্দের প্রবর্তক— শশাঙ্ক না আকবর?
শিবমন্দিরে বঙ্গাব্দ: বঙ্গাব্দ শব্দটি আকবরের শাসনামলের চেয়ে বহু শতাব্দী প্রাচীন দুটি শিব মন্দিরে পাওয়া গিয়েছে। – – – আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে তা কীভাবে সম্ভব? – – – ।

বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় শশাঙ্ক তথ্য: – – – শশাঙ্কপক্ষীয়দের অভিমত এখন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ। ২০২৩ থেকে ১৪২৯ বাদ দিলে পাওয়া যায় ৫৯৪। অর্থাৎ ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দ

বামা থেকে হায়াৎ মামুদ, ড. মোহাম্মদ আমীন, নির্মলেন্দু গুণ

ছিল বঙ্গাব্দের প্রথম বছর। – – – শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল মতান্তরে ১৪ই এপ্রিল স্বাধীন শাসক হিসেবে গৌড়ের (বঙ্গ) সিংহাসনে আরোহন করেন। – – – সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি বঙ্গাব্দ চালু করেন। সৌর বিজ্ঞানভিত্তিক হিসেবে অনুযায়ী ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল বা ১৪ই এপ্রিল সোমবার, সূর্যোদয়ের সময়ই বঙ্গাব্দের সূচনা।

বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় আকবর তত্ত্ব: আকবরপক্ষীয়দের অভিমত, খাজনা আদায়ের সুবিধা এবং রাজ্যাভিষেককে স্মরণীয় করে রাখা জন্য ১৫৮৪ খ্রিষ্টব্দে সম্রাট আকবর তাঁর শাসনামলের ২৯তম বর্ষে তারিখ-ই-ইলাহি নামের সৌর বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ফসলি সন হিসেবে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরিতে আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। – – -সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরিকে ৯৬৩ বঙ্গাব্দ ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জী প্রবর্তন করেন। – – – খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হোক বা রাজ্যাভিষেককে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হোক— বঙ্গাব্দ ১ বর্ষ থেকে শুরু না করে ৯৬৩ থেকে শুরু করা হলো কেন? ৯৬৩ বর্ষকে আকবরের চেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি ধরার কোনো জোরালো কারণ আছে কি?
আকবরের অভিষেক: ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৩ বছর বয়সে আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। ওই সময় বা তারিখ বা বর্ষ থেকে বাংলা সন প্রবর্তন হলে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল না হয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি হওয়া কথা। কিন্তু ১৪ই ফেব্রুয়ারি হলো না কেন?
বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠাসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য: আকবরের আমলে রচিত প্রামাণ্য গ্রন্থ “আইন-ই-আকবরি”। এই গ্রন্থে গ্রন্থে ভারতবর্ষ-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন বর্ষপঞ্জীর ধারাবাহিক বিবরণ রয়েছে, অথচ আকবরের বঙ্গাব্দ বা ফসলি সন প্রবর্তনের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই । – – – আকবর যদি বাংলা সনের প্রবর্তক হতেন, তাহলে আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে তা উল্লেখ করা হয়নি কেন? গোপন রাখার কারণ কী? – – –
মাসের নামকরণ: সম্রাট আকবর ছিলেন ফারসিভাষী মুসলিম। তিনি বাংলা জানতেন না। সংস্কৃতের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। তাঁর আমলে রাজকীয় তত্ত্বাবধানে ছোটো-বড়ো যা কিছু হয়েছে সে সবের নাম ফারসি ভাষা, পরিবারপরিজন, প্রিয় মানুষ, প্রভাবশালী আমাত্য বা ইসলামি সংস্কৃতিভিত্তিক হয়েছে। তাহলে কেন বঙ্গাব্দের বার মাসের নাম সংস্কৃত ভাষায় নামায়িত পৌরাণিক দেবীর নামানুসারে করেছেন? ওই বারো দেবী আকবরের কাছে কী কারণে প্রিয় হয়ে উঠেছিল?
ধর্ম ও সংস্কৃতি: মুসলিম শাসক-প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের স্বতস্ফূর্ত উচ্ছাস এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে দেখা যায় তার বিপরীত। মুসলিম শাসক আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে এমন হওয়ার কারণ কী?
ফসলি সন: আকবর পক্ষীয়দের বক্তব্য, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে আকবর বঙ্গের জন্য ফসলি সন হিসেবে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেছিলেন। – – – বঙ্গাব্দ ফসলি সন নয়। যদি ফসলি সন হতো তাহলে বৈশাখ দিয়ে শুরু করা হতো না। শুরু করা হতো অগ্রহায়ণ বা ফসল উঠে এরূপ অন্য কোনো মাস দিয়ে। – – -বৈশাখ মাসে কোনো ফসল উঠে না। এই মাসে রাজস্ব আদায়ের জন্যও অনুকূল নয়। – – -ফসলি সন হলে কেন বৈশাখকে প্রথম মাস করা হলো?
বঙ্গে আকবরের নিয়ন্ত্রণ ও বঙ্গাব্দ: আকবরে পক্ষদের অভিমত, ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তিত। এসময় বাংলার খুব সামান্য অংশ মোগলাধীন ছিল। ১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে গৌড়রাজ্যে বা বঙ্গদেশে মোঘলদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। – – -নিয়ন্ত্রণ প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে আকবর কেন রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে আওতাবহির্ভুত এলাকার জন্য বঙ্গাব্দ চালু করবেন? আকবর কি এত বোকা ছিলেন? – – –
এগারো সুবা বাদ কেন: – – –আকবরের সাম্রাজ্য বারোটি সুবায় বিভক্ত ছিল। যথা: – – -। তিনি ১১টি সুবা বাদ দিয়ে কেবল বাংলার জন্য কেন একটি আলাদা বর্ষপঞ্জী করলেন? অন্যান্য সুবাহ কী দোষ করেছিল? সেখান থেকে কি খাজনা আদায় করা হতো না? সেখানে কি ফসলি সনের প্রয়োজন ছিল না?
পহেলা বৈশাখের ভারতবর্ষীয় বিস্তার: – – –দক্ষিণ এশিয়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং বাংলাদেশের অনেক অবাঙালি উপজাতি বিভিন্ন নামে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পহেলা বৈশাখ পালন করে থাকে। তাদের এই ধর্মীয় উৎসবের বয়স অনেক ক্ষেত্রে সহস্র বছরের অধিক। আকবর যদি ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করে থাকেন তো ওই সব এলাকায় কীভাবে এর আগে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান পালন করা হতো? – – –
পহেলা বৈশাখ ও হালখাতা: নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর আমলে হালখাতার সূচনা। রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি এই খাতা প্রচলন করেন।

বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল শুদ্ধীকরণ: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল কারণ ও প্রতিকার

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১১৯ থেকে ১৪৩

বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল, শুদ্ধীকরণ ও উত্তর: প্রশ্ন নং ৯১ থেকে ১১৮

হেডা অণ্ড লিঙ্গ: অণ্ডকোষ লিঙ্গ ও জ্ঞানচর্চা

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

poodleköpek ilanları
Casibom