ড. মোহাম্মদ আমীন
বাল, আবাল, আবালবৃদ্ধ, বনিতা এবং আবালবৃদ্ধবনিতা; বেসরকারি, কিন্তু অসরকারি নয় কেন
বাল, আবাল, আবালবৃদ্ধ, বনিতা এবং আবালবৃদ্ধবনিতা
বাল: ‘বাল (√বল+অ)’ বাংলায় ব্যবহৃত একটি তৎসম শব্দ। এর আভিধানিক ও প্রায়োগিক অর্থ বালক, শিশু, কিশোর, প্রভৃতি। শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে : বালা ও বালি। বালা শব্দের অর্থ অল্পবয়সি মেয়ে, বালিকা, কন্যা, দুহিতা, যুবতী প্রভৃতি।‘বালি’ শব্দের অর্থ কিশোরী, বালিকা প্রভৃতি। ‘বাল’ শব্দ নিয়ে গঠিত শব্দরাশির
কয়েকটি হলো: বালচর্চা (শিশুপালন), বালবাচ্চা (ছোটো ছেলেমেয়ে), বালবিধবা (যে কন্যা বালিকা অবস্থায় বিধবা হয়েছে), বালবৈধব্য (বালিকা অবস্থায় বৈধব্যদশা), বালভোগ (বালক কৃষ্ণকে প্রদত্ত প্রাতঃকালীন ভোগ, বালভোগ্য (শিশুদের উপভোগের যোগ্য), বালসুলভ (বালকোচিত), বালসূর্য (নবোদিত সূর্য), বালশশী (শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার চাঁদ) প্রভৃতি।
বালক: ‘বালক (বাল+ক)’ শব্দের অর্থ অল্পবয়স্ক পুরুষ সন্তান, অনূর্ধ্ব ষোলো বছরের পুরুষ, শিশু, অর্বাচীন, নির্বোধ, অপক্ব, অনভিজ্ঞ প্রভৃতি। ‘বালক’ শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে বালিকা।
আবাল: আ+বাল= আবাল। ‘বাল’ শব্দের ‘আ’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘আবাল’ শব্দ গঠিত হয়েছে। বিস্তৃতি, পর্যন্ত, ব্যাপকতা প্রভৃতি প্রকাশে ‘আ’ উপসর্গটি ব্যবহৃত হয়। যেমন : আ+মৃত্যু= মৃত্যু পর্যন্ত। সে বিবেচনায় ‘আবাল’ শব্দের গঠনের সঙ্গে আকণ্ঠ, আপাদমস্তক, আমরণ, আসমুদ্রহিমাচল, আজীবন, আজন্ম প্রভৃতি শব্দের গঠনের মিল রয়েছে। গঠন অনুযায়ী আবাল শব্দের আভিধানিক অর্থ বাল্যাবধি, বাল্যকাল থেকে, অল্পবয়স থেকে, শিশুকাল থেকে প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, আবাল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে আবালি।
আবালবৃদ্ধ: ‘আবালবৃদ্ধ (আবাল+√বৃধ্+ত)” শব্দের অর্থ হচ্ছে বালক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলে। এখানে শুধু বালক ও বৃদ্ধের কথা বলা হয়েছে। কাজেই এটি পুঃলিঙ্গ জ্ঞাপক।
বেসরকারি, কিন্তু অসরকারি নয় কেন?
‘অ’ বাংলা উপসর্গ। এটি সমাসে অন্য পদের পূর্বে বসে অনৌচিত্য, অভাব (অযত্ন), বৈপরীত্য, অল্পতা, অন্যত্ব (অবাঙালি), অত্যন্ত (অমূল্য), প্রবলতা (অকষ্ট)
প্রভৃতি অর্থ প্রকাশ করে। বাংলা উপসর্গ হিসেবে ‘অ’ সাধারণত বাংলা শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়।অন্যান্য শব্দের সঙ্গেও যুক্ত হতে বাধা নেই। ফারসি উপসর্গ হিসেবে ‘বে’ বর্ণিত অর্থাদি প্রকাশের জন্য সাধারণত ফারসি শব্দের আগে যুক্ত হয়। যেমন: বেআইনি, বেআক্কেল, বেআদব, বেআন্দাজ, বেআন্দাজি, বেআবরু, বেইজ্জত, বেইজ্জতি, বেইনসাফি, বেইমান, বেইমানি, বেওয়াফা, বেওয়ারিশ, বেকসুর, বেকায়দা, বেকার, বেগানা, বেগুনাহ, বেচয়েন, বেজুত, বেজোড়, বেঢক, বেঢপ, বেতার, বেতাল, বেদখল, বেদখলি, বেদলীয়, বেদস্তুর, বেদাগ, বেদরকারি, বেদল, বেদস্তুর, বেদানা, বেধড়ক, বেনজির, বেনাম, বেনামা, বেনামি, বেনিয়ম, বেপরোয়া, বেপর্দা, বেপাড়া, বেফাঁস, বেফায়দা, বেবন্দেজ, বেবন্দোবস্ত, বেমতলব, বমালুম, বেয়াদব, বেয়াদবি, বেরসিক, বেসরকারি, বেসামরিক, বেহাত, বেহায়া, বেহায়াপনা, বেহাল, বেহিসাব, বেহিসাবি, বেহুঁশ, বেহুদা, বেহেড প্রভৃতি।
উৎস:
- কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
- ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।