সময় ও তারিখ: বাংলা সময়: বাংলায় সময় ও তারিখ লেখার নিয়ম: প্রমিত নিয়ম: ‘তারিখ’ শব্দের উৎস

. মোহাম্মদ আমীন

সময় ও তারিখ: বাংলা সময়: বাংলায় সময় ও তারিখ লেখার নিয়ম: প্রমিত নিয়ম: ‘তারিখ’ শব্দের উৎস
বাংলায় সময় লেখার নিয়ম

বাংলায় সময় লেখার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুরসণ করতে দেখা যায় না। বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সময় লিখে থাকেন— উচ্চারণেও দেখা যায় ভিন্নতা। অনেকে লিখেন‘ঘটিকা’। ঘটি বা খুদে জলপাত্র থেকে ঘটিকা শব্দের উদ্ভব। একসময় নির্দিষ্ট ধারায় ঘটির বিন্দু বিন্দু জল পতনের পরিমাণ থেকে সময় নির্ধারণ করা হতো। তাই সময়ের সঙ্গে ঘটিকা শব্দটি যুক্ত করা হয়েছিল। এখন সময়ের সঙ্গে ঘটি বা ঘটির জলের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সময়জ্ঞাপক সংখ্যার পরে‘ঘটিকা’ লেখা প্রমিত রীতির পরিপন্থী। অতএব, সময়জ্ঞাপক বর্ণনায়‘ঘটিকা’ লিখবেন না। বাংলায় সময় লেখার এবং তা উচ্চারণের বিষয়ে বাংলা একাডেমির নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনা নিম্নরূপ:

  • ১.০০ টা ( উচ্চারণ/অ্যাকটা/)।
  • পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

    ১.০৫ মি: (উচ্চারণ/অ্যাকটা পাঁচ্‌/)।

  • ১.১০ মি: (উচ্চারণ/অ্যাক্‌টা দশ্‌/।
  • ১.১৫ মি: (উচ্চারণ/অ্যাক্‌টা পোনেরো বা সোয়া অ্যাক্‌টা/)।
  • ১.২০ মি: (উচ্চারণ/অ্যাক্‌টা বিশ বা অ্যাক্‌টা কুড়ি/)
  • ১.৩০ মি: (উচ্চারণ/অ্যাক্‌টা ত্রিশ বা দেড়্‌টা/।
  • ১.৪৫ মি: ( উচ্চারণ/ অ্যাক্‌টা পঁয়তাল্‌লিশ. পোউ্‌নে দুটো/)।
  • ২.০০ টা (উচ্চারণ/দুটো/)।
  • ২.৩০ মি: (উচ্চারণ/দুটো ত্রিশ্‌ বা আড়াই্‌টা বা আড়াই্‌টে/)
  • ৩.০০ টা (উচ্চারণ/ তিন্‌টা বা তিন্‌টে/)।
  • ৪.০০ টা (উচ্চারণ/চার্‌টা বা চার্‌টে/)।
  • ৫.০০ টা (উচ্চারণ/পাঁচ্‌টা/)।
  • ৬.০০ টা (উচ্চারণ/ছঁটা/)।
  • ৭.০০ টা (উচ্চারণ/সাত্‌টা/)।
  • ৮.০০ টা (উচ্চারণ/আট্‌টা/)।
  • ৯.০০ টা (উচ্চারণ/নঁটা/)।
  • ১০.০০ টা (উচ্চারণ/দশ্‌টা/)।
  • ১১.০০ টা (উচ্চারণ/অ্যাগারোটা/)।
  • ১২.০০ টা (উচ্চারণ/ বারোটা/)।
তারিখ শব্দের উৎস
তারিখ বাংলা ভাষার শব্দ। তবে আদি উৎস আরবি। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত আরবি উৎসের বাংলা তারিখ শব্দের অর্থ হলো— মাসের দিননির্দেশক সংখ্যা, তিথি।
অনেকে বলেন, তারিখ ফারসি উৎসের শব্দ। তা ঠিক নয়। ফারসিতেও তারিখ আছে। ফারসিতে ব্যবহৃত তারিখ শব্দটি আরবি হতে গৃহীত। তবে, বাংলায় ব্যবহৃত তারিখ শব্দটি ফারসি হয়ে বাংলায় আসতে পারে। এজন্য অনেকে ‘তারিখ’ শব্দকে ফারসি উৎসের বলে থাকেন। আসলে, বাংলা তারিখ আরবি উৎসের শব্দ।
বাংলায় তারিখ লেখার ও পড়ার নিয়ম
স্কুলজীবনে শিক্ষক ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ২রা জুন, ১লা মে, ৩রা এপ্রিল, ৪ঠা মে, ৮ই ডিসেম্বর প্রভৃতি শিখিয়েছেন। এখন তারিখ লেখার সময় সংখ্যার পর ‘শে রা লা ঠা ই’। চিহ্ন-সমূহ এখন অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় না। লেখা হয় যথাক্রমে ২৬ মার্চ, ২ জুন, ১ মে, ৩ এপ্রিল, ৪ মে, ৮ ডিসেম্বর প্রভৃতি। কেন এমন লেখা হয়? একজন বললেন, “শে রা লা ঠা ই ধ্বনিগুলো না-দিলেও পড়ার সময় তারিখের সঙ্গে ওই বর্ণগুলো পড়া হয়ে যায়। তাই এসব লেখা অপ্রয়োজনীয়। উচ্চারণ প্রয়োজনীয় হলে উচ্চারণ-নির্দেশক চিহ্ন অপ্রয়োজনীয় হবে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “বাংলা একাডেমি এসব চিহ্ন ছাড়াই তারিখ লেখার নির্দেশনা প্রদান করেছে।” আসলে কী তাই? দেখা যাক, বাংলা একাডেমি কী বলে? ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধান। যা ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। ওই অভিধানের পরিশিষ্টে (পরিশিষ্ট গ) বাংলা তারিখ ও সময় কীভাবে লেখা হবে তা বর্ণিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে —
  • ১ তারিখ লেখা হয়েছে : ১লা, উচ্চারণ /পয়্‌লা/ [যেমন : ১লা জানুয়ারি।]
  • পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

    ২ তারিখ লেখা হয়েছে : ২রা, উচ্চারণ /দোশ্‌রা/ [ যেমন : ২রা ফেব্রুয়ারি।]

  • ৩ তারিখ লেখা হয়েছে : ৩রা, উচ্চারণ /তেশ্‌রা/;[ যেমন : ৩রা মার্চ।]
  • ৪ তারিখ লেখা হয়েছে : ৪ঠা, উচ্চারণ /চোউ্‌ঠা/; [ যেমন : ৪ঠা এপ্রিল]
  • ৫ তারিখ লেখা হয়েছে : ৫ই, উচ্চারণ /পাঁচোই/; [ যেমন : ৫ই মে]
  • ৬ তারিখ লেখা হয়েছে : ৬ই, উচ্চারণ ছওই; [ যেমন : ৬ই জুন]।
  • ১৯ তারিখ লেখা হয়েছে : ১৯শে, উচ্চারণ /উনিশে/; [ যেমন : ১৯শে জুলাই]।
  • ২১ তারিখ লেখা হয়েছে : ২১শে, উচ্চারণ /একুশে/;[ যেমন: ২১শে ফেব্রুয়ারি]।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে লেখা হয়েছে, “অ্যাক বৈশাখ, অ্যাগারো জ্যৈষ্ঠ, শোলো ডিসেম্বর, পোঁচিশ বৈশাখ প্রভৃতি উচ্চারণ অশুদ্ধ। শুদ্ধ ও মান্য রীতি হলো যথাক্রমে পয়লা বৈশাখ, অ্যাগারোই জ্যৈষ্ঠ, শোলোই ডিসেম্বর, পোঁচিশে বৈশাখ প্রভৃতি।”
২১শে না কি ২১এ
প্রথমে বলে রাখি: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (পরিশিষ্ট গ) অনুযায়ী (বাংলা তারিখ ও সময়) একমাত্র প্রমিত শব্দ ২১শে। ওখানে ২১এ বানানের কোনো শব্দ নেই। ওই অভিধানমতে ২১শে কথার উচ্চারণ একুশে। ২১/একুশ শব্দের সঙ্গে এ-প্রত্যয় যুক্ত হয়ে শব্দটি গঠিত হয়েছে।অতএব, শুদ্ধ ও প্রমিত হচ্ছে ২১শে। ২১এ কথার উচ্চারণ হয় একুশ-এ; এমন লিখবেন না। এটি কোনো ভবন বা স্থানের নম্বর হতে পারে। যেমন: ২১ এ ধানমণ্ডি, ঢাকা। ২১-এ মহাখালী, ঢাকা। ২১এ মগবাজার। একুশ+এ= একুশে; যেমন: বালিশ+এ= বালিশে, সালিশ+এ= সালিশে। অনুরূপ: ২১ (একুশ)+এ= একুশে। ২২ (বাইশ)+এ= বাইশে। অতএব, ২১শে লিখুন। ২১এ/২১ এ/২১-এ লিখবেন না।

বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান রীতি এবং বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী অ্যাক বৈশাখ, অ্যাগারো  জ্যৈষ্ঠ, শোলো ডিসেম্বর, পোঁচিশ বৈশাখ প্রভৃতি উচ্চারণ অশুদ্ধ। শুদ্ধ ও মান্য রীতি হলো যথাক্রমে পয়লা বৈশাখ, অ্যাগারোই জ্যৈষ্ঠ, শোলোই ডিসেম্বর, পোঁচিশে বৈশাখ প্রভৃতি। অতএব, ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখকে একুশে ফেব্রুয়ারি বা ২১শে ফেব্রুয়ারি লেখা পুরোপুরি শুদ্ধ, সিদ্ধ প্রমিত।

সূত্র:
  • ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
  • কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

You cannot copy content of this page