ডেঙ্গু শব্দের অর্থ: ডেঙ্গু কী এবং কেন: ব্যুৎপত্তি, উৎপত্তি
ড. মোহাম্মদ আমীন
“ডেঙ্গু” শব্দের আদি উৎস সম্পর্কে গবেষকগণ নিশ্চিত নন, যদিও রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বলা হয়, শব্দটির উৎস সোয়াহিলি(Swahili)। সোয়াহিলি শব্দবন্ধ “কা-ডিঙ্গা পেপো” থেকে ‘ডেঙ্গা’ শব্দের উদ্ভব। প্রসঙ্গত, “কা-ডিঙ্গা পেপো” শব্দবন্ধের অর্থ, দুষ্ট আত্মার কারণে সৃষ্ট রোগ। আফ্রিকান লোকজন মনে করত, এই রোগটি দুষ্ট আত্মারা ছড়ায়। অনেকের মতে, শব্দটির অর্থ “জলীয় বিষ” এবং ‘হাড়ভাঙ্গা’। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ‘ডিঙ্গা’ এসেছে স্পেনীয় শব্দ Dengue থেকে। যার অর্থ ছিল, খুঁতখুঁতে, সবাধানি, স্পর্শকাতর প্রভৃতি। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগিরা সাধারণত খুঁতখুঁতে বা অতি সাবধানি হয়ে পড়ত। তাই রোগটির নাম হয় Dengue। তবে, জাতিভেদে রোগটির লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন দেখা যেত। যেমন, ওয়েস্টইন্ডিজের ক্রীতদাসরা এ রোগে আক্রান্ত হলে ভঙ্গিমা ও চলন ডান্ডি বা নৌকার মতো হয়ে যেত। তাই রোগটি “ডান্ডি জ্বর” নামেও পরিচিত ছিল।
অনেকের মতে, ডেঙ্গু শব্দের অর্থ, “break-bone”। সুতরাং, ডেঙ্গু জর অর্থ “break-bone fever”। পেশী ও হাড়ে যন্ত্রণা এ জ্বরের অন্যতম লক্ষণ বলে রোগটির নাম হয় “break-bone fever”। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ফিলাডেলফিয়ার মহামারীর উপর লিখিত ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রতিবেদনে পদার্থবিদ বেঞ্জামিন রাশ প্রথম “break-bone fever” কথাটি ব্যবহার করেন। ডেঙ্গুর জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য শব্দের মধ্যে “ব্রেকহার্ট ফিভার” এবং “লা ডেঙ্গু” উল্লেখযোগ্য। প্রবল রোগের জন্য ব্যবহৃত শব্দের মধ্যে “ইনফেকচুয়াস থ্রম্বোসাইটোপেনিক পার্পারা”, “ফিলিপাইন”, “থাই হেমোরেজিক ফিভার” এবং “সিঙ্গাপুর হেমোরেজিক ফিভার” অন্যতম।তবে, যেসব দেশে এ রোগটি প্রথম দেখে ছড়িয়ে পড়ছিল সেসব দেশে রোগটি ‘ডেঙ্গু’ নামে অভিহিত হতো। তাই নানা নামের মধ্যে ডেঙ্গু নামটিই মুখ্য হয়ে উঠে। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের পর ডেঙ্গু জ্বর শব্দটির ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, সম্ভাব্য ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনার প্রথম বিবরণ পাওয়া চীনে। জিন বংশের (২৬৫-৪২০ খ্রিষ্টাব্দ) আমলে এক চীনা মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়ায় “জলীয় বিষ” নামের একটি নতুন রোগের কথা বলা হয়, যা উড়ন্ত পতঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ রোগটি উড়ন্ত পতাকা হতে সৃষ্ট, কিন্তু তা যে মশা সেটি নিশ্চিত ছিল না। মূলত, ওই রোগটিই ছিল আধুনিক ডেঙ্গু। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে “এডিস ইজিপ্তাই” মশার পরিবাহিতা নিশ্চিত হয়।