প্যালিনড্রোম কাঁকড়া শব্দ : চার সের চা

ড. মোহাম্মদ আমীন

প্যালিনড্রোম কাঁকড়া শব্দ : চার সের চা

প্যালিনড্রোম ( Palindrome) এমন প্রকৃতির শব্দ, সংখ্যা, বাক্য বা অর্থবহ লেখা যাকে প্রথম বা শেষ যে দিক থেকে পড়া হোক না কেন শব্দ বা বাক্যের ক্ষেত্রে অর্থ এবং সংখ্যার ক্ষেত্রে গাণিতিক মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন : চাচা, দাদা, মলম, সন্ন্যাস, নতুন, সুবল লাল বসু, রমাকান্ত কামার, সদানন্দ দাস, বই চাইব, সীমার মাসী, দাস কোথা থাকো সদা, চার সের চা; ১১, ১২১, ২৩২, ২৪৪২, ১২৩২১, ১২৩৪৫৪৩২১, ৬০৩৯৩০৬;

বই চাইব।
তুমি কি মিতু?
বিকল্প কবি।
লেপে কী পেলে।
Women understand men, few men understand women.

এসব শব্দ, সংখ্যা ও বাক্য প্রথম দিক থেকে পড়লে যে অর্থ বা মান হবে, শেষের দিক থেকে পড়লেও একই অর্থ অর্থ বা মান হবে। বাংলায় এগুলোকে প্রান্তনিরপেক্ষ বা কাঁকড়া শব্দ/বাক্য/সংখ্যাও বলা হয়। স্বর্গচ্যুত হওয়ার পর অ্যাডাম ও ইভ উভয়ের চেহারা বিরহ, ক্লান্তি, শ্রম, ক্ষুধা, অস্বাভাবিক পরিবেশ প্রভৃতির কারণে ভেঙে পড়েছিল। দীর্ঘ বছর নাওয়া-খাওয়াও হয়নি। পানি পান করতে গিয়ে নিজেদেরই চিনতে পারছিলেন না নিজেরা। এ অবস্থায় অনেক বছর অ্যাডাম-এর মতো একজনকে দেখে ইভ বিস্মিত হয়ে স্বগোতক্তি করেন, Eve.

আনন্দে আপ্লুত অ্যাডাম বলেছিলেন, Madam In Eden, I'm Adam.
উভয়ের কথোপকথন ছিল প্যালিনড্রোম।
ড. মোহাম্মদ আমীন

Adam শব্দকে উলটে দিলে হয়, Madam, ইভ (Eve) শব্দটিও Palindrome। অনেকের বিশ্বাস, অ্যাডাম ইভকে ডাকতেন ম্যাডাম, এটি তার নিজ নামের উলটো রূপ। পুরুষ নারীর বিপরীত তাই।

সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যালিনড্রোম শব্দ হচ্ছে Mom বা Mum. মেয়েদের জন্য Madam. সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যালিনড্রোম বাক্য : “ΝΙΨΟΝ ΑΝΟΜΗΜΑΤΑ ΜΗ ΜΟΝΑΝ ΟΨΙΝ। ” প্রাচীন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে বহু জায়গায় পাথরে খোদিত অবস্থায় বাক্যটি পাওয়া গিয়েছে। বাক্যটির অর্থ – শুধু মুখ নয় পাপকেও ধৌত করো। প্যালিনড্রোমটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চার্চের সামনে দেখা যায়। অনেকে এই প্যালিনড্রোমটিকে স্বর্গ হতে আগত বলে বিশ্বাস করেন।নেপোলিয়নের বলে কথিত বিখ্যাত উক্তি আমি এলাম, দেখলাম ও জয় করলাম বাক্যটি ছিল : Able was I ere I saw Elba। এটিও প্যালিনড্রোম। আর একটি জনপ্রিয় উপদেশ : Borrow or rob. Nauru- দেশের অধিবাসীদের বলা হয় Nauruan. এটিই পৃথিবীর একমাত্র প্যালিনড্রোম জাতি।

চতুর্দশ শতকের ভবিষ্যৎবক্তা সূর্য পণ্ডিতের লেখা ‘রামকৃষ্ণ বিলোম কাব্যম’ নামে ৪০টি শ্লোকের যে বিখ্যাত কবিতা রয়েছে তার রচনাশৈলী বেশ চমৎকার এবং অদ্ভুত। এর প্রত্যেকটি শ্লোক এক-একটি প্যালিনড্রোম। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, কবিতাটি সামনে থেকে পড়লে রাম ও রামায়ণের কাহিনি এবং পেছন থেকে পড়লে কৃষ্ণ ও মহাভারতের কাহিনি। যেমন ৩ নং শ্লোকে রয়েছে “তামসীত্যসতি সত্যসীমতা মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা। মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা তামসীত্যসতি সত্যসীমতা।” পবিত্র কোরআন শরিফেও বহু প্যালিনড্রোম শব্দ রয়েছে।তবে, আরবি ভাষায় কেবল ব্যঞ্জনধ্বনির বর্ণ আছে, স্বরধ্বনির কোনো বর্ণ নেই। তাই আরবি ভাষার কোনো শব্দকে অন্য ভাষায় লিপ্যন্তর করার সময় ওই ভাষার নিয়মানুযায় স্বরবর্ণ যুক্ত করতে হয়। কিন্তু পিল্যানড্রোম চরিত্র পর্যবেক্ষণ করতে হলে আরবি ভাষার স্বরবর্ণহীনতাকে মেনে নিয়ে করতে হয়। যেমন : Hajjah.

সাহিত্যিক এডওয়ার্ড বেনবো ৪০ হাজার শব্দের একটি উপন্যাস লিখেছেন। এটি কোনো সাধারণ উপন্যাস নয়, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, উপন্যাসটি পুরোটাই প্যালিনড্রোমিক। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এভাবে- ANON NOW, EVEN ODDER I HAVE MADE LINES.এবং শেষ হয়েছে- SENILE DAM. EVA HIRED DON. EVE WON NONA.

বাংলা সাহিত্যের একমাত্র প্যালিনড্রোমার দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। তিনি শুধু লেখক হিসেবে নন প্যালিনড্রোমার হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। তিনিই সম্ভবত প্রথম বাঙালি যিনি বাংলায় প্যালিনড্রোম বিষয়ে ব্যাপক চর্চা করেছেন। তার কয়েকটি প্যালিনড্রোম বাক্য হলো :

কাক কাঁদে কাক কাঁ।
চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে।
তাল বনে নেব লতা।
মার কথা থাক রমা।
রমা তো মামা তোমার।
চার সের চা।
বেনে তেল সলতে নেবে।
ক্ষীর রস সর রক্ষী।
কেবল ভুল বকে।
দাস কোথা থাকো সদা?
নিমাই খসে সেখ ইমানি।
থাক রবি কবির কথা।
নিম্নের কথোপকথনটি পুরোই প্যালিনড্রোম  :
“Are we not pure?
“No, sir!” Panama’s moody Noriega brags. “It is garbage!” 
Irony dooms a man—a prisoner up to new era.”
যারা প্যালিন ড্রোমারদের ভয় করে তাদের বলা হয়, “Aibohphobia” এটিও একটি প্যালিনড্রোমিক শব্দ।
--------------
উপরোক্ত উপরিউক্ত এবং উর্পযুক্ত
ভেটো পকেট-ভেটো ও ছদ্ম-ভেটো
বিদ্যুদায়ন বিদ্যুতায়ন; বৈদ্যুতিক; বিদ্যুদায়িত বিদ্যুতায়িত
#subach

You cannot copy content of this page