বিসিএস (BCS): পাশ করার উপায়: যারা বিসিএস পাশ করে (কৈফিয়ত)

বিসিএস (BCS): পাশ করার উপায়: যারা বিসিএস পাশ করে (কৈফিয়ত)

ড. মোহাম্মদ আমীন

জুলিয়া নাহির প্রশ্ন: বিসিএস পরীক্ষা (BCS Exam) কী? এই পরীক্ষায় পাশ করার উপায় কী? বইপুস্তকমতে, ‘বিসিএস পরীক্ষা (BCS Exam)’-এর পূর্ণ রূপ: Bangladesh Civil Service Examination। কিন্তু এর গড়ন-গাড়ন আর আনুপূর্বিক ঘটনাদি দেখে মনে হয়, ‘বিসিএস পরীক্ষা (BCS Exam) ’-এর পূর্ণ রূপ: Bangladesh Chance Service Examination বা বাংলাদেশ দৈবচয়ন (লটারি/জুয়া) পরীক্ষা।
ড. মোহাম্মদ আমীন

‘বিসিএস’ হলো মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী একদল মুখস্থবাজ (মেধাবী নয়) চাকুরিপ্রার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত/অনুষ্ঠেয় পরীক্ষানামক বিশেষ দৈবচয়ন বা জুয়াখেলা বা লটারি। আপনি এক লাখ তথ্য মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলেন কমন পড়েছে মাত্র সত্তর শতাংশ বা ১০ শতাংশ। আরেকজন এক হাজার তথ্য মুখস্থ করে কমন পেলেন ৯৫ শতাংশ। আপনি ফেল, সে পাশ। এখানে জ্ঞানের বা জানার কোনো বাহাদুরি নেই। বাহাদুরিটা ভাগ্যের। সত্য বলতে, কী আমি এই ভাগ্যের জোরে বিসিএস পাশ করেছি।

তাই আপনার কাজ হচ্ছে সামনে যা পান তা পড়ে যাওয়া— ইটের রং লাল কেন, রবীন্দ্রনাথের কোন বইয়ে কয়টি ‘ওগো’ আছে, রোডেশিয়ার রাজধানীতে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে কত ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল . . . এসব আকামের পড়া আর কি! ভাগ্যে থাকলে কমন পড়বে; কমন পড়লে পাশ, নইলে ফেল, ক্যাসিনোর মতো হতাশ। প্রিলি কিংবা লিখিত উভয় পরীক্ষায় একই কথা প্রযোজ্য। সাক্ষাৎকারে তা আরও বেশি প্রকট।
পাঁচ লাখ প্রার্থী; পদ মাত্র তিন হাজার। নেওয়া হবে তিন হাজার— বাকি সবাই কি অযোগ্য? কখনও না। এত বেশি সংখ্যক প্রার্থী থেকে এত কম বাছাই কেবল যোগ্যতার ধারক নয়; মূলত সংখ্যার ধারক। যা অনেকটা জুয়ার মতো ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। আমার আছে পাঁচটি, আমি এক হাজার জনকে কীভাবে দেব? তাঁরা যতই জ্ঞানী বা যোগ্য হোক না। তাই কৌশলগত কারণে পরীক্ষানামক জুয়ার আশ্রয় নিতে হয়। এছাড়া কোনো উপায় নেই।
আছে কি?
অতএব, যারা বিসিএস পাশ করেন না বা করতে পারেন না তাঁদের সবাইকে অযোগ্য ভাবার হেতু নেই। পদ নেই, দেবেন কীভাবে, নেবেন কীভাবে? এ তো আমাদের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার দীনতা। সর্বদা প্রার্থীর দীনতা হতে যাবে কেন?
একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী যে পরিমাণ সময় শ্রম ও মেধা সাধারণ জ্ঞানের পেছনে ব্যয় করেন তা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন তার পেছনে ব্যয় করতেন তাহলে তাঁরা দেশে চাকুরি পান বা না পান বৈশ্বিক বাজারে নিয়োগের ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতেন। বিসিএস যারা পাশ করেন তাঁরা যে কম জানেন এমন না। তাঁরা অনেক কিছু জানেন এবং অনেক ক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে বেশি জানেন। কিন্তু সমস্যাটা হলো তাদের জানার অধিকাংশই কেবল জানার, কাজের জানা মোট জানার কেবল কিয়দংশ; সিংহভাগই অপচয়। John Naisbitt-এর ভাষায় বলতে পারি, They are drowning in information but starved for knowledge.

You cannot copy content of this page