হরিলুট, হরিলুট কথার উদ্ভব

ড. মোহাম্মদ আমীন

হরিলুট, হরিলুট কথার উদ্ভব

শুবাচি অসিত দাস তাঁর ‘নামধামের উৎসকথা গ্রন্থে লিখেছেন, “বহুল প্রচলিত হরিলুট কথাটির আদি রূপ ছিল হরির লুস। লুস কথাটির প্রাচীন অর্থ ভোজন।”
পরবর্তীকালে হরির লুস কথাটি হয়ে যায় হরিলুট। কিন্তু, এমন হওয়ার কারণ কী? প্রধান কারণ— লোকনিরুক্তি। হরিলুট কথাটি লোকনিরুক্তির কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের মুখে এসে হরিলুট হয়ে গেছে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ অভিধানেও লুস কথাটির অর্থ দেওয়া হয়েছে ভোজন। সে হিসেবে হরির লুস অর্থ— হরির ভোজন।
.
মূলত হরি বা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদিত অর্ঘ্য বা ভুজ্যি, মিষ্টি প্রভৃতি প্রসাদ ভক্তদের দিকে ছুড়ে দেওয়ার দীর্ঘ সংস্কার হরির লুস নামে প্রচলিত ছিল। লুস শব্দর অর্থ, যে ভোজন তা অধিকাংশ বাঙালি জানত না। তারা দেখত— যা হরির লুস নামে পরিচিত তা অসংখ্য লোকজন লুটেরার মতো হুড়োহুড়ি করে লুটিয়ে নিচ্ছে। এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। লুটের মতো যার শক্তি বা লোকবল বেশি সে অধিক পাচ্ছে। যারা নিরীহ তারা কিছুই পাচ্ছে না। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এমন ঘটনা লুটের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। তাই সাধারণ মানুষের কাছে লুস কথাটি হয়ে যায় লুট। ফলের হরির লুস হয়ে যায় হরির লুট বা হরিলুট।
.
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত হরি ও বাংলা লুট শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হরিলুট অর্থ— (বিশেষ্যে) হরি সংকীর্তনের পর ভক্তদের মাঝে হরির নামে বাতাসা প্রভৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার সংস্কার। এটি নেতিবাচক নয়। অভিধানে যাই থাকুক না কেন, বর্তমানে হরিলুট শব্দটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অধুনা এর আলংকারিক ও বহুল প্রায়োগিক অর্থ— জোর যার মুল্লুক তার, সরকারকা মাল, দরিয়ামে ঢাল। অর্থাৎ, সেই বেশি ভোগ করতে পারবে, যার শক্তি বেশি। যার শক্তি ও ক্ষমতা নেই সে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটানোর সুযোগও পাবে না।
তেলাপোকার দৌঁড় আর ইুঁদরের খুট,
সরকারি টাকাপয়সার চলছে হরিলুট।
.
উৎস: পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment

You cannot copy content of this page