ৎ: আস্ত-ত বনাম খণ্ড-ত: ৎ-বিধি; উচিত বনাম উচিৎ

ড. মোহাম্মদ আমীন 

ৎ: আস্ত-ত বনাম খণ্ড-ৎ: ৎ-বিধি; উচিত বনাম উচিৎ

বানানে খণ্ড-ত ( ৎ ): খণ্ড-ত হলো ‘ত’ বর্ণের হস-চিহ্ন যুক্ত ( ত্ )-এর রূপভেদ। ৎ ব্যবহারের কয়েকটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
(১) বাংলায় তৎসম শব্দের অন্ত্যবর্ণ হিসেবে খণ্ড-ত এর ব্যবহার দেখা যায় । যেমন সৎ , মহৎ , অর্থাৎ , হঠাৎ , ঈষৎ , শরৎ , তাবৎ , জগৎ , যকৃৎ , বিদ্যুৎ ।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

(২) কোনো কোনো শব্দের শেষে বর্ণেে খণ্ড-ত-এর বিকল্পে ‘দ’ হয় । যেমন শরৎ > শরদ্ , ( তবে শরদ্ শব্দটি প্রচলিত নয় ) পর্ষৎ > পর্ষদ্ , উপনিষৎ > উপনিষদ্ , বিপৎ > বিপদ্ ।

(৩) কোনো প্রত্যয়ের অন্তবর্ণ খণ্ড-ত হলে ওই প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দের শেষে স্বভাবতই খণ্ড-ত হয় । যেমন অভিজিৎ ,ইন্দ্রজিৎ ( জিৎ ) পথিকৃৎ , পুণ্যকৃৎ ( কৃৎ ) কদাচিৎ , কিঞ্চিৎ (চিৎ ) জলবৎ , পুত্রবৎ , (বৎ) কৃষিবৃৎ , জ্যোতির্বিৎ (বিৎ ) অগ্নিসাৎ , আত্মসাৎ (সাৎ )

(৪) যেসব শব্দের শেষে খণ্ড-ত-এর বিকল্প হয় না সে শব্দের সঙ্গে ষষ্ঠী বা সপ্তমী বিভক্তি কিংবা কোনো প্রত্যয় যুক্ত হলে খণ্ড-ত পরিবর্তিত হয় । যেমন জগৎ> জগতের, শরৎ> শরতের, মহৎ> মহতের ।

(৫) যে সব শব্দের শেষে খণ্ড-ত-এর বিকল্প হয়, সেগুলোর সঙ্গে ষষ্ঠী বা সপ্তমী বিভক্তি কিংবা কোনো প্রত্যয় যুক্ত হলে খণ্ড-ত বর্ণের জায়গায় ‘দ’ হয় । যেমন পরিষৎ > পরিষদের, উপনিষৎ > উপনিষদের, পর্ষৎ > পর্ষদের ।

(৬) বিদেশি শব্দের বাংলা বানানে সর্বদা ‘আস্ত-ত’ বসবে; খণ্ড-ৎ নয়। তৎসম শব্দের বানানে ‘ত’ ও ‘খণ্ড-ৎ’ উভয়ের ব্যবহার আছে। তবে বিদেশি শব্দের বানানে কোথাও ‘খণ্ড-ৎ’ হবে না। সবসময় ‘আস্ত-ত’ ব্যবহৃত হবে। যেমন: আখেরাত, আদালত, আমানত, আয়াত, কিসমত, কুদরত, কেয়ামত, কৈফিয়ত, খেসারত, জালিয়াত, তফাত, তবিয়ত, দস্তখত, দৌলত, নসিহত, ফেরত, বজ্জাত, বেহেশ্ত, মওত, মজবুত, মতলব, মেহনত, শরবত, শরিয়ত, শাহাদত, সওগাত, সুন্নত, হিম্মত, হেফাজত প্রভৃতি।

আস্ত-ত বনাম খণ্ড-ত
বাংলা বর্ণমালায় ‘খণ্ড-ৎ’ ও ‘আস্ত-ত’ ভিন্ন বর্ণ হিসেবে দেখানো হলেও ‘খণ্ড-ৎ’ প্রকৃতপক্ষে ‘ত’-এর খণ্ডিত রূপ। খণ্ড-ৎ সাধারণত শব্দের আগে বসে না, মধ্যে বা শেষে বসে। তবে কিছু বিদেশি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে শব্দের শুরুতে ‘খণ্ডৎ’-এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন : ৎসাহাস (একজন জার্মান লেখক)।
‘খণ্ড-ৎ’ বর্ণের সঙ্গে স্বরচিহ্ন অর্থাৎ /অ আ ই ঈ উ ঊ এ ঐ ও ঔ/ যুক্ত হয় না। তাই খণ্ডৎ এর উচ্চারণ হলন্ত। তবে খণ্ড-ৎ এর সাথে রেফ্ যুক্ত হতে দেখা যায়। যেমন: ভর্ৎসনা।
কোনো শব্দে ‘খণ্ড-ৎ’ না কি ‘আস্ত-ত’ বসবে সে বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হলে এবং কোনো অভিধান দেখারও সুযোগ না থাকলে খণ্ড-ৎ না বসিয়ে ‘আস্ত-ত’ বসালে ভুলের আশঙ্কা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। বিদেশি শব্দের বেলায় আস্ত-ত/ ও /খণ্ড-ৎ/ এর ব্যবহার এককালে সমভাবে প্রয়োগ করা হতো। প্রমিত বানানে বিদেশি শব্দে ‘আস্ত-ত’ ব্যবহার করা হয়। যেমন : মতলব, হিম্মত, ইজ্জত, কেয়ামত, তফাত, জিয়ারত, হযরত, দস্তখত, বহুত প্রভৃতি।
বিদেশি শব্দের বাংলা বানানে সর্বদা ‘আস্ত-ত’ বসবে; খণ্ড-ৎ নয়। তৎসম শব্দের বানানে ‘ত’ ও ‘খণ্ড-ৎ’ উভয়ের ব্যবহার আছে। তবে বিদেশি শব্দের বানানে কোথাও ‘খণ্ড-ৎ’ হবে না। সবসময় ‘আস্ত-ত’ ব্যবহৃত হবে।
যেমন: আখেরাত, আদালত, আমানত, আয়াত, কিসমত, কুদরত, কেয়ামত, কৈফিয়ত, খেসারত, জালিয়াত, তফাত, তবিয়ত, দস্তখত, দৌলত, নসিহত, ফেরত, বজ্জাত, বেহেশ্ত, মওত, মজবুত, মতলব, মেহনত, শরবত, শরিয়ত, শাহাদত, সওগাত, সুন্নত, হিম্মত, হেফাজত প্রভৃতি।

খণ্ড-ৎ, অনুস্বার(ং) এবং স্বরচিহ্ন

কোনো শব্দের বানানে বিদ্যমান ‘খণ্ড-ৎ’ বা অনুস্বার (ং)-এর সঙ্গে স্বরচিহ্ন বা প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘খণ্ড-ৎ’ পরিবর্তন হয়ে ‘ত’ এবং অনুস্বার পরিবর্তন হয়ে ঙ হবে। যেমন:
  • জগৎ: জগতে, জাগতিক,
  • বিদ্যুৎ: বিদ্যুতে, বৈদ্যুতিক,
  • ভবিষ্যৎ: ভবিষ্যতে,
  • আত্মসাৎ: আত্মসাতের,
  • সাক্ষাৎ: সাক্ষাতে, সাক্ষাতের,
  • রং: রঙের,
  • সং: সঙের প্রভৃতি।
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
.

উচিত বানানে খণ্ড-ত (ৎ) হয় না কেন?

উচিত (√উচ্+ত) সংস্কৃত শব্দ। বাক্যে সাধারণত বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত উচিত শব্দের অর্থ — যোগ্য, যথাযথ প্রভৃতি। এটি ত-প্রত্যয় সাধিত শব্দ। তাই বানানে আস্ত-ত অনিবার্য।

শব্দটির শেষ বর্ণ উচ্চারণে হসন্ত। তাই ‘খণ্ড-ৎ’ হবে না কি ‘আস্ত-ত’ হবে তা নিয়ে সংশয় লেগে যায়। অনেকে ‘উচিত’কে তৎক্ষণাৎ কুৎসিত করে দেন হঠাৎ খণ্ড-ৎ বসিয়ে।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

উচিত বানানে খণ্ড-ৎ দেবেন না, সর্বদা আস্ত-ত দেবেন। কেন খণ্ড-ৎ দেবেন না তা আগে বলেছি।

এখন দেখুন নিমোনিক:
খণ্ডিত কোনো কিছু উচিত হতে পারে না। সম্পৎ আছে বলে গিন্নির জন্য বাজার থেকে হঠাৎ করে খণ্ডিত শাড়ি নিয়ে এলেন, কী বিপৎ হবে বুঝতে পারছেন?
খণ্ড-ৎ মূলত আস্ত-ত এর অর্ধাংশ। খণ্ডিত বলে খণ্ড-ৎ বর্ণটি উচিত বানানের জন্য খণ্ডিত শাড়ির মতো অনুচিত। তাই উচিত বানানে অনুচিত খণ্ড-ৎ দিতে নেই। উচিত বানানে হঠাৎ করে হঠাৎ বানানের খণ্ড-ৎ না দিয়ে তফাত বানানের আস্ত-ত দিন।
যদি খণ্ড-ৎ এর প্রতি আপনার খুব বেশি আগ্রহ থাকে তাহলে আপৎ, বিপৎ, সম্পৎ প্রভৃতি বানানে খণ্ড-ৎ দিতে পারেন। এতে আপনার বিপদ না হলেও বিপৎ হবে না। তবে উচিত বানানে খণ্ড-ৎ দিলে আপনার আপৎ ও বিপৎ দুটোই হতে পারে।
খণ্ডিত জিনিস কেউ পছন্দ করুক বা না করুক আপনার কোনো প্রিয়জন পছন্দ করবে না। উচিত জায়গায় উচিত বর্ণ দিন।
এতবার উচিত দেখলেন, আর ভুল হবে কি?
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।
নিমোনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

poodleköpek ilanlarıpoodleköpek ilanları
CasibomCasibom