চক্ষুদান নচিকেতা: চক্ষুদান অর্থ চুরি করা কেন; নচিকেতা শব্দের অর্থ

চক্ষুদান নচিকেতা: চক্ষুদান অর্থ চুরি করা কেন; নচিকেতা শব্দের অর্থ

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘চক্ষুদান করা’ অর্থ চুরি করা কেন: চক্ষুদান করা বাগ্‌ভঙ্গির শাব্দিক অর্থ দৃষ্টিশক্তি দান করা, দিব্যজ্ঞান প্রদান করা, দিব্যজ্ঞান দিয়ে মূর্খ বা জড় বস্তুকেও সচল করা, কিন্তু চক্ষুদান করা কথার আলংকারিক অর্থ চুরি করা। এটি বাক্যে সাধারণত বাগ্‌ধারা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তাই অর্থটি আলংকারিক। চক্ষুহীনকে চক্ষু দিলে সে চলাফেরায় সক্ষম হয়, দিব্যজ্ঞান লাভ করে। ফলে চক্ষুলাভকারী ব্যক্তি বা বস্তু অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারে; অন্যের অগোচরেও স্থানান্তর হতে পারে। চুরি করতে হয় দ্রব্যের মালিক বা

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

অন্য কারো অগোচরে। কোনো দ্রব্য যখন চুরি হয়ে যায় তখন ধরে নেওয়া হয়, চোর দ্রব্যটিকে চক্ষুদান করেছে কিংবা দিব্যজ্ঞান প্রদান করে জড় বস্তুকেও অন্যের অগোচরে তার ইচ্ছা দ্বারা চালিত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দ্রব্যটি চক্ষু পেয়ে সবার অগোচরে চোরের দখলে চলে এসেছে, বেহাত হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। সুতরাং চক্ষুদান করা মানে— যে দ্রব্যটা চুরি গেছে বা চুরি হয়েছে তাকে চক্ষুদান করা, দিব্যজ্ঞান প্রদান করা, চোরাই মালের চক্ষুলাভ প্রভৃতি। দ্রব্যটি যেন চক্ষু পেয়ে বা দিব্যজ্ঞান পেয়ে মালিক-সহ সংশ্লিষ্ট সবার অগোচরে চলে এসেছে চোরের কাছে। আবার চক্ষুদান কথার অর্থ— নজর দেওয়া, দৃষ্টি রাখা। চোর কোনো কিছু চুরি করতে গেলে ওই জিনিস এবং একই সঙ্গে মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি/নজর দিয়ে থাকে। যাতে সবার অগোচরে জিনিসটি চুরি করতে পারে। এভাবে চক্ষু দিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চুরি করতে হয় বলে চক্ষুদান করা বাগ্‌ভঙ্গির আলংকারিক অর্থ হয়েছে চুরি করা।

নচিকেতা: নচিকেতা অর্থ কী? সংস্কৃত নচিকেতস্ থেকে নচিকেতা। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, শব্দটির অর্থ (বিশেষ্যে) উদ্দালক ঋষির পুত্র; অগ্নি। উপনিষদ মতে, নচিকেতা ছিলেন বাজশ্রবস মুনির (উদ্দালক) পুত্র। উদ্দালক আয়োধধৌম্য ঋষির শিষ্য ছিলেন। উদ্দালকের আসল নাম আরুণি।আইল থেকে উত্থিত হয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন বলে, তাঁর নামকরণ করেন উদ্দালক। মহাভারতের অনুশাসনপর্বের ৭১-অধ্যায়ে আছে: মহর্ষি উদ্দালক একদিন নদীর তীরে একটি নিয়মানুষ্ঠান সেরে বাড়ি এসে, পুত্র নচিকেতাকে ভুলে ফেলে আসা অনুষ্ঠানের কাঠ, কুশ, ফুল, কলস ও খাদ্যদ্রব্যাদি নিয়ে আসার আজ্ঞা দিলেন। নচিকেতা গিয়ে দেখেন, নদীর স্রোতে সব ভেসে গেছে। ফিরে এসে জানালে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর উদ্দালক রেগে বললেন, তোমার ‘যমদর্শন’ হোক। এরপর নচিকেতার মৃত্যু হয়। পুত্রের মৃত্যুতে উদ্দালক বিলাপ করতে থাকেন। এক দিন এক রাত্রি পর্যন্ত তাঁকে কুশাসনে শুইয়ে রাখা হয়। ভোর বেলায় নচিকেতা আবার বেঁচে উঠেন। নচিকেতা যমালয়ের বিবরণ দেন এবং উদ্দালকের প্রতি যমের প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবশত নচিকেতাকে কিরূপ সম্মান দেখানো হয়েছে তার বর্ণনা দেন। আসলে নচিকেতার মৃত্যু হয়নি। উদ্দালক ‘যমদর্শন হোক’ বলেছিলেন। তাই তাঁর প্রতি সম্মানবশত যমালয় দর্শনের জন্য নচিকেতাকে যমালয়ে নেওয়া হয়েছিল।

উৎস: পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

 

 

Leave a Comment

You cannot copy content of this page