ড. মোহাম্মদ আমীন
লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি; তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে, ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা
তুঙ্গস্থান: বৃহ্সপতি এখন আমার তুঙ্গে: প্রত্যেকটি গ্রহের একটি করে উচ্চ বা তুঙ্গক্ষেত্র আছে। রবির তুঙ্গস্থান মেষরাশি; চন্দ্রের তুঙ্গস্থান বৃষরাশি; এভাবে, মঙ্গলের তুঙ্গস্থান মকর; বুধের তুঙ্গস্থান কন্যা; বৃহস্পতির তুঙ্গস্থান কর্কট; শুক্রের তুঙ্গস্থান মীন; শনির তুঙ্গস্থান তুলা; রাহুর তুঙ্গস্থান মিথুন ও কেতুর তুঙ্গস্থান ধনু। রাশির জন্য গ্রহ তুঙ্গে থাকা শুভফলপ্রদ। বৃহস্পতি (শুভগ্রহ) কর্কট রাশিতে অবস্থান করলে এ রাশির জাতক বলতে পারে: ‘বৃহস্পতি আমার এখন তুঙ্গে’। মানে খুব ভালো অবস্থানে আছে, দিনকাল ভালো যাচ্ছে। জ্যোতিষীরা কিন্তু হাতের তালুতেও বৃহ্স্পতির দেখা পায়।
ভিস্তি বনাম ভিস্তিওয়ালা: ভিস্তি ফারসি শব্দ। ভিস্তি থেকে ভিস্তিওয়ালা। অভিধানমতে, ভিস্তি অর্থ— ১.পানি বহনের জন্য চর্মনির্মিত এক প্রকারের থলি, মশক। ২.মশকে করে পানি বহনকারী; মশকে পানি সরবরাহকারী; ভিস্তিওয়ালা। অর্থাৎ ভিস্তি ও ভিস্তিওয়ালা সমার্থক। “জুতা আবিষ্কার” কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
“তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।”
লুচ্চা লোচ্চা লুচি ও লুচ্চামি: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, লুচ্চা হিন্দি উৎসের শব্দ। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হিন্দি লুচ্চা অর্থ— চরিত্রহীন, লম্পট। লুচ্চার সমার্থক লোচ্চা। প্রয়োগ: যে দেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও আমলাদের অধিকাংশ লম্পট সে দেশের অধিকাংশ জনগণও লম্পট। মাথা ঘুরলে পা স্থির থাকতে পারে না। অধুনা বাংলায় লুচ্চা শব্দটি দিয়ে মেয়েলোলুপ কিংবা মেয়েদের প্রতি যৌন বাসনায় লোলুপ পুরুষদের প্রকাশ করার অধিক প্রবণতা লক্ষণীয়। যেমন: শালা একটা লুচ্চা, মেয়ে দেখলে আর ঠিক থাকতে পারে না। সংস্কৃত লোচিকা থেকে উদ্ভূত লুচি অর্থ— (বিশেষ্যে) ময়দার তৈরি তেল বা ঘিয়ে ভাজা পাতলা ও ছোটো পুরি। লুচ্চার সঙ্গে লুচির খাওয়াগত সম্পর্ক থাকলেও চরিত্রগ বা আচরণগত কোনো সম্পর্ক নেই।
–ড. মোহাম্মদ আমীন, কোথায় কী লিখবেন, বাংলা বানান প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.