ড. মোহাম্মদ আমীন
‘উপর’ ও ‘ওপর’ উভয় শব্দের অর্থ অভিন্ন। অর্থে ভিন্নতা না থাকলেও প্রয়োগ নিয়ে ব্যবহারকারীগণ অনেক সময় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। কবি-সাহিত্যিক, পণ্ডিত ও বৈয়াকরণগণের অভিমত, সাধু ভাষায় রচিত কিংবা চিন্তামূলক প্রবন্ধে ‘উপর’ বা ‘উপরে’ শব্দ ব্যবহার করাই দীর্ঘ রীতি।
‘ওপর’ ও ‘ওপরে’ শব্দ দুটো যথাক্রমে ‘উপর’ ও ‘উপরে’ শব্দের কথ্যরূপ, অধুনা চলিতরূপ। ইদানীং অনেকে গল্প উপন্যাস এমনকি চিন্তামূলক প্রবন্ধেও ‘ওপর’ লিখছেন। অনেকে আবার চলিত গদ্যেও ‘উপর’ বা ‘উপরে’ লেখার পক্ষপাতি। অনেকের মধ্যে গম্ভীর বা হালকা যে-কোনো রচনায় ‘ওপর’ বা ‘ওপরে’ লেখার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অনেকে মনে করেন, সাধুরীতিতে ব্যবহৃত ‘উপর’ বানানটি ধ্বনি পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বরসঙ্গতির নিয়মানুসারে চলিত রীতিতে ‘ওপর’ হয়েছে।
‘উপর’ শব্দটি অবিকল সংস্কৃত নয়। সংস্কৃত ‘উপরি’ শব্দ থেকে তদ্ভব ‘উপর’ শব্দের এবং এই ‘উপর’ শব্দ থেকে বাংলা ‘ওপর’ শব্দের উদ্ভব। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬) অনুযায়ী সংস্কৃত উপরি থেকে উদ্ভূত অতৎসম ‘উপর’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে ঊর্ধ্বভাগ, ঊর্ধ্বদিক, ঘরের ছাদ; বিশেষণে ঊর্ধ্ব স্থিত, উচ্চ, অতিরিক্ত এবং অব্যয়ে প্রতি।
আসলে বাংলা ভাষায় এখনও অনেক শব্দের বানান ও ব্যবহারে আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। বৈয়াকরণ ও কবিসাহিত্যিকগণের নিজস্ব মত ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আদর্শ ভাষা রীতি প্রতিষ্ঠায় বৈয়াকরণ কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এ জন্য দায়ী। এতক্ষণ যা বললাম, তার সারবত্তা হলো : ‘ওপর’ এবং ‘উপর’ সমার্থক শব্দ। ‘উপর’ হচ্ছে ‘ওপর’ শব্দের কথ্যরূপ এবং চলিত রূপ।বাক্যে ব্যবহারের সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখলে চলবে। অন্যকিছু ভাবার প্রয়োজন নেই। যেমন :
মাথার উপর বোঝা আছে।
মাথার ওপর বোঝা আছে।
উপরে আকাশ, নিম্নে বাতাস।
ওপরে আকাশ, নিম্নে বাতাস।
‘ওপর’ কথ্য এবং ‘উপর’ সাধু শব্দ। তবে এখন ‘ওপর’ শব্দটি চলিত ও কথ্য উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়। তেমনি ‘উপর’ কথাটিও সাধু ও চলিত উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়। সুতরাং ‘উপর’ এবং ‘ওপর’ দুটোই শুদ্ধ। তবে একই লেখায় উভয় শব্দের প্রয়োগ বিধেয় নয়।অতএব ‘উপর’ লিখবেন না ‘ওপর’ লিখবেন এ নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে যে কোনো একটি লিখুন।