ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রশ্নপত্রে ভুল: পিএসসির দায় কতটুকু; বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নজিরবিহীন ভুল বানান
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল) বিসিএস (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুলের কারণ ও পিএসসির দায় সম্পর্কে পিএসসির চেয়ারম্যান জনাব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল।
আলাপের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের শুরু থেকে ছাপা পর্যন্ত কোনো পর্যায়ে কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের কেউ সম্পৃক্ত থাকেন না। থাকার সুযোগও নেই। নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী পিএসসি প্রশ্নকারীদের প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করার অনুরোধ করেন। মডারেটরগণ তা সংশোধন করেন। প্রশ্নকারী ও মডারেটরগণ প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদগ্ধ শিক্ষক। এঁদের কেউ পিএসসির কর্মকর্তা নন। তাঁরা ৬ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে তা ছাপানোর জন্য সরাসরি বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেন। পরীক্ষার কয়েকদিন পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিএস প্রেস হতে ৬ সেট প্রশ্নপত্র সিলগালা অবস্থায় গ্রহণ করেন। সংগৃহীত প্রশ্নপত্র উপযুক্ত স্থানে নিরাপদ ভল্টে সম্মিলিত জিম্মায় সংরক্ষণ করা হয়। পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আধ ঘণ্টা আগে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে লটারির বা দৈবচয়নের মাধ্যমে ৬ সেট প্রশ্নপত্র থেকে এক সেট প্রশ্নপত্র নির্বাচন করে। এরপর নির্বাচিত সেটের নাম বিভিন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাচিত সেটের প্রশ্নই হলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পূর্বে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা হয়। তখনই আমাদের প্রশ্নপত্র দেখার সুযোগ হয় এবং জানতে পারি কোথায় কী রয়েছে। এর আগে আমাদের কারও প্রশ্নপত্র বিষয়ে কোনো কিছু দেখার বা জানার সুযোগ থাকে না। বরং আমাদের আগে পরীক্ষার্থীগণ প্রশ্নপত্র পেয়ে যান। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, প্রশ্নপত্রের ভুল বা অসংগতিতে পিএসসির সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই কিছু করারও নেই।
“আপনাদের কি আসলেই কিছু করার নেই?” আমার প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান মহোদয় বললেন, প্রশ্নকর্তা ও মডারেটগণকে আমরা আরও সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ করতে পারি। তৃতীয় কোনো পক্ষকে দেখাতে গেলে গোপনীয়তাসংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়। ভুলত্রুটি কাম্য নয়; তবু বাধ্য হয়ে কিছুটা মেনে নেওয়া গেলেও গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি একবিন্দুও মেনে নেওয়া যায় না। তাই অনেক সতর্ক থাকার পরও কিছু ত্রুটি থেকে যায়। এ বিষয়ে আমরা আরও সতর্ক থাকার তাগিদ অনুভব করছি এবং থাকব।
বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল বানান
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কিছু ভুল বানান ও অসংগতি নিচে দেওয়া হলো।
শুদ্ধীকরণ:
ব-দ্বীপ সমূহ> ব-দ্বীপসমূহ (পদাশ্রিত নির্দেশক সেঁটে বসে।)
মূলনীতিগুলি কি কি ? > মুলনীতি কী কী?/ মূলনীতিগুলো কী? (একই পদের জন্য একই সঙ্গে দুটি বহুবচন পরিহার্য। ‘-গুলো’ আর ‘কী কী’ দুটোই বহুবচনজ্ঞাপক। তাই ‘গুলো’ দিলে বহুবচনজ্ঞাপক দুটো ‘কী কী’ বাহুল্য। )
অধিকারসমূহ কি কি ?> অধিকারসমূহ কী?/অধিকার কী কী?
বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল বানান
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নপত্রে ইংরেজি অনুবাদ করার জন্য নির্ধারিত বাংলা অনুচ্ছেদের কিছু ভুল বানান ও অসংগতি বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানবিধি অনুসারে নিচে তুলে ধরা হলো। আমার চিহ্নিত প্রতিটি ভুলের সঙ্গে সবাই একমত নাও হতে পারেন। মন্তব্য থাকলে দেবেন। ঋদ্ধ হতে পারব। দ্বিমতই মতকে শক্তিশালী করে। অধিকন্তু, আমারও ভুল হতে পারে। দেখিয়ে দেবেন। লেখাটি পরিশুদ্ধ হবে।
শুদ্ধীকরণ:
বহ্নি শিখার নাম> বহ্নিশিখা (বহ্নিশিখার কোনো নাম দেওয়া হয়নি)
.
.
.
কেননা> কেননা, [ কেননা পদের পর যতিচিহ্ন হিসেবে কমা (,) বাঞ্ছনীয়]
.
.
.
যে জানতে চায়> সে জানতে চায় (এখানে পূর্ব ও পরের বাক্য বিবেচনায় ‘সে’ হয়)
নিজ জাতিসত্ত্বার> নিজ জাতিসত্তার
উদ্বুদ্ধ করে> দ্ পৃথক থাকা বিধেয় ছিল।
.
একুশের বইমেলা> অমর একুশে গ্রন্থমেলা ( ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নাম ছিল ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে হয়েছে অমর একুশে বইমেলা।)
বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন: সরকারী বানানে এখনো ঈ-কার কেন
বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১ থেকে ৩০