মহেন্দ্রক্ষণ বনাম মাহেন্দ্রক্ষণ; কাঁচা কাচা কচি কাচ; ও সাগর কন্যারে কাঁচা সোনা গায়

মহেন্দ্রক্ষণ বনাম মাহেন্দ্রক্ষণ; কাঁচা কাচা কচি কাচ; ও সাগর কন্যারে কাঁচা সোনা গায়

ড. মোহাম্মদ আমীন

মহেন্দ্রক্ষণ’ বানানের কোনো শুদ্ধ শব্দ বাংলায় নেই। বাংলা ব্যাকরণমতে মহেন্দ্রক্ষণ বানানের কোনো শব্দ অর্থপূর্ণভাবে গঠিত হতে পারে না। এটি অর্থহীন। শব্দটির শুদ্ধ, ব্যাকরণিক ও অর্থপূর্ণ রূপ— মাহেন্দ্রক্ষণ। কেন মহেন্দ্রক্ষণ হতে পারে না দেখুন— মহেন্দ্র বিশেষ্য। এর অর্থ— পৌরাণিক চরিত্রবিশেষ,

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ব্যক্তিনাম, নামবিশেষ। সাধারণভাবে মহেন্দ্র অর্থ— ‘দেবরাজ ইন্দ্র’। ক্ষণ শব্দটিও বিশেষ্য। একটি বিশেষ্য আরেকটি বিশেষ্যকে সরাসরি বিশেষায়িত করতে পারে না। মহেন্দ্র‘ শব্দটি ক্ষণ শব্দের সঙ্গে যুক্ত করে ‘মহেন্দ্রক্ষণ বানালে অর্থ হবে— ‘দেবরাজ ইন্দ্র ক্ষণ’, দেবরাজ ইন্দ্র সময়; যা অর্থহীন এবং হাস্যকর। তাই, সময় নির্দেশক বিশেষ্য ‘ক্ষণ’-এর পূর্বে ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য ‘মহেন্দ্র’ সরাসরি যুক্ত না-করে বিশেষণ বানিয়ে যুক্ত করতে হয়৷ তাহলে এটি অর্থসমৃদ্ধ হয়। এটিই বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম। তৎসম বিশেষ্যকে বিশেষণে পরিণত করার একটি সহজ উপায়— ‘ষ্ণ (অ)’ প্রত্যয় যুক্ত করা। মহেন্দ্র শব্দের সঙ্গে ‘ষ্ণ’ প্রত্যয় যুক্ত করলে কেমন হয় দেখুন— মহেন্দ্র+ষ্ণ = মাহেন্দ্র (বিশেষণ )। এখানে বৃদ্ধির সূত্রানুসারে প্রথম অ-স্বর, আ-স্বরে পরিণত হয়েছে। তৎসম মাহেন্দ্রক্ষণ শব্দের অর্থ— শুভক্ষণ, উপযুক্ত সময়; জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কল্পিত শুভযোগ।

কাঁচা কাচা কচি কাচ: ও সাগর কন্যারে কাঁচা সোনা গায় —। কাঁচা: কাঁচা অর্থ (বিশেষণে) অপক্ব (ক্-য়ে ব), অপরিণত, অস্থায়ী, অশুষ্ক, পারদর্শী নয় এমন। এটি দেশি শব্দ। কাঁচা ফল পাকা ফলের চেয়ে শক্ত। তাই কাঁচা ফল খেতে ছুরি লাগে। চন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ছুরি। এজন্য কাঁচা বানানে ছুরির প্রতীক চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়। কাঁচার মতো কাঁচা-যুক্ত সব শব্দে চন্দ্রবিন্দু।বীন্দ্রনাথের ভাষায়, ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা- – -। কাঁচা আম, কাঁচা কাজ, কাঁচাগোল্লা, কাঁচা ঘুম, কাঁচা চুল, কাঁচা টাকা, কাঁচাপাকা, কাঁচা বয়স, কাঁচাবাজার, কাঁচা বুদ্ধি, কাঁচামাল, কাঁচামিঠা, কাঁচা রসিদ, কাঁচা লেখা, কাঁচা মাংস, কাঁচা ইট, কাঁচা বুদ্ধি, কাঁচা ঘর, কাঁচা হাতের কাজ, কাঁচা বয়স, কাঁচা হিসাব, কাঁচা সোনা, কাঁচা কাঠ, কাঁচা সের, কাঁচা রাস্তা- সব কাঁচায় চন্দ্রবিন্দু।

  • কাপড় কাচা: তবে কাপড় কাচতে গেলে চন্দ্রবিন্দু পড়ে যেতে পারে। তাই কাপড় কাচার কাচা বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।
  • কচি: কচি বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই কেন? কচি মানে কাঁচা নয়, শিশু, নবজাত, কোমল, নরম। যেমন: কচিখোকা, কচিকাঁচার আসর। কচিদের মাথায় চন্দ্রবিন্দুর বোঝা দিতে নেই। পিঠ তাদের এমনই বইয়ের ভারে ন্যুব্জ।
  • গ্লাসের কাচ: কিন্তু গ্লাসের কাচে চন্দ্রবিন্দু নেই কেন? কাচ একটি ভঙুর জিনিস। হঠাৎ পড়ে গেল কাচের সঙ্গে চন্দ্রবিন্দুটাও ভেঙে যাতে পারে। একটামাত্র চন্দ্র ভেঙে গেলে জোছনা আপুর কী হবে? তাই কাচের গ্লাসের কাচ বানানে চন্দ্রবিন্দু দিতে নেই।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page