‘গরু’ বানান কি অশুদ্ধ? ‘গরু’ লিখলে কি ভুল হবে?

. মোহাম্মদ আমীন

‘গরু’ বানান কি অশুদ্ধ? ‘গরু’ লিখলে কি ভুল হবে?

শুবাচির পৃষ্ট বিষয়ড. মোহাম্মদ আমীন স্যার, “ধরুন আপনাকে বাংলা একাডেমির বর্তমান বানানবিধি অনুযায়ী শুদ্ধতা নির্ধারণের জন্য বাংলা বিষয়ের পরীক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। একজন পরীক্ষার্থী cow-এর বাংলা লিখল গরু’ এবং রমজান পরবর্তী ইসলাম ধর্মীয় উৎসবকে লিখল ঈদ আপনি তাকে নম্বর দেবেন?” ‘গরু’ বানান কি অশুদ্ধ? ‘গরু’ লিখলে কি ভুল হবে? দেখুন অন্যান্য বিষয়: #subach

`গরু’ বানান অশুদ্ধ নয়। `Cow’ অর্থেগরুলিখলে নম্বর দেব। কারণ, গরু’ বানান লিখে সে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানবিধির কোনো ব্যত্যয় ঘটায়নি। ওই বিধিতে এমন কোনো নিয়ম নেই যাতে গরু’ লিখলে বিধি লঙ্ঘিত হবে। সুতরাং, বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানবিধি অনুযায়ী গরুগোরুদুটোই শুদ্ধ। অনেকে গোরু লিখেন। আমি নিজে গোরু লিখি। কারণ:

  • তৎসম গোরূপ থেকে খাঁটি বাংলা গোরু শব্দের উদ্ভব।
  • প্রাচীন গ্রন্থসমূহে গো বানানের প্রাধান্য লক্ষণীয়।
  • আমাকে গোকুল, গোচারণ, গোধূলি, গোশালা, গোয়াল, গোয়ালা, গোমাংস, গোপাল, গোমূত্র, গোহাটা, গোয়ালঘর, গোষ্পদ, গোবেচারা, গোষ্ঠী, গোমূত্র প্রভৃতি শব্দের বানানে গো দিতে হয়।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ঈদ লিখলে নম্বর দেব না। কারণ, ঈদ’ লিখে সে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানবিধির ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। ওই বিধিতে বলা হয়েছে: বিদেশি বা অতৎসম শব্দের বানানে ঈ/ঈ-কার হবে না, ই/ই-কার হবে। যেমন: চীন, শ্রীলঙ্কা সংস্কৃত শব্দ। তাই ঈ-কার দিয়ে লিখি। ইদ সংস্কৃত শব্দ নয় যে আমাকে  দিতে হবে। অনেকে ঈদ লিখেন। আমি সাধারণত ইদ লিখি। কারণ:

  • ইদ আরবি উৎসের বাংলা শব্দ। এটি সংস্কৃত শব্দ নয়।
  • ইদ ইসলামিক শব্দ। এর স্বকীয়তা আরবি হতে বাংলায়, সংস্কৃত হতে নয়। তাই শব্দটি সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করে না, বাংলা ব্যাকরণ বিধি অনুসরণ করে।
  • বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানবিধি অনুযায়ী ঈদ’ বানান অসংগত এবং ইদ’ বানান সংগত। বাংলা একাডেমি আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এর অনেক দুর্বলতা থাকতে পারে, সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবু জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমার আস্থার বিষয়। আমার পিতার অনেক দুর্বলতা থাকতে পারে। তারপরও পিতা।
  • অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রমিতি বানানবিধি অনুসরণ করি। এ শব্দটির ক্ষেত্রে নয় কেন? সংস্কৃত পণ্ডিতদের প্রভাব আর কতকাল বয়ে চলব? আমি সংস্কৃত ঈদ নয়, বাংলা ইদ চাই।
  • বাংলায় উচ্চারণগত দীর্ঘস্বর নেই।
  • মধ্যযুগের মুসলিম কবিরা কবিরা ইদ লিখেছেন। শব্দটি পরে সংস্কৃত পণ্ডিতদের কলমে এসে ঈদ হয়ে যায়।
  • এটি মহাভারতের কোনো শব্দ নয় যে, সংস্কৃত পণ্ডিতগণকে দেবতা গণ্যে আমাকে ঈদ বানান লিখতে হবে।
  • শিক্ষা, পারিবারিকভাবে অর্জিত ইসলামি মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক নিজকীয়তা অনুযায়ী আমি ইদ বানানকে সংগত মনে করি।
  • সংস্কৃত পণ্ডিতবর্গ ঈদ লিখে ওই বানানে আমাদের অভ্যস্ত করে তুলেছেন বলে আমাকেও ঈদ লিখতে হবে কেন? আমার কি কোনো নিজত্ব নেই?
  • আমি সাধারণত অনানুষ্ঠানিক আলাপ কিংবা ঘরোয়া পরিবেশের কথাবার্তায় জল শব্দটি ব্যবহার করি না। পানি শব্দটিই ব্যবহার করি।

সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

মুরগির দুধ গোরুর ডিম, তেত্রিশ কোটি দেবতা, বাংলো, ডাকবাংলো ডাকবাংলা, নকিব, মৃধা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেননি

#subach

Leave a Comment

You cannot copy content of this page